কক্সবাজারে অকালীন ভারী বৃষ্টিতে চলতি বছরের লবণ চাষের মৌসুম কার্যত আগাম শেষ হয়ে গেল। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কিছু চাষী ফের মাঠে নামতে পারে। সাধারণত: বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে।
আবহাওয়া ভাল থাকায় গতবছর নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত আরো ১০ দিন বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু এ বছর উৎপাদন মৌসুম কার্যত নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়ে গেছে। বিসিকের মতে, ৯ মে পর্যন্ত দেশে লবণ উৎপাদন ১৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে।
বিসিক সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে ২২ লাখ ১৭ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কক্সবাজারে প্রায় ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। শুক্রবার (৭ মে) পর্যন্ত বিসিকের সর্বশেষ মাঠ জরীপ রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। তবে শনি ও রোববার দুইদিনে আরো ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে আশা করছেন কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভুইয়া।
তিনি বলেন, আগাম বৃষ্টিতে অনেক চাষী মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। যে কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। তবে আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কিছু চাষী ফের মাঠে নামতে পারেন।
বিসিক জানায়, দেশের ৯০ শতাংশ লবণই কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়। কক্সবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকী সাত উপজেলা যথাক্রমে সদর, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকুলীয় নিম্নভুমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু সোমবারের ভারী বৃষ্টির কারণে কার্যত আগাম থেমে গেল লবণ মৌসুম।
কক্সবাজার আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সোমবার ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এরআগে চলতি মাসের ৪ তারিখ ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
গত মৌসুমে কক্সবাজারে সর্বশেষ বৃষ্টিপাত হয় নভেম্বরের ৪ তারিখ। এদিন মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারে। এর টানা ৫ মাস পর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল কক্সবাজারে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
বিসিকের মতে, হালকা বৃষ্টিপাতে লবণ চাষের তেমন কোন ক্ষতি না হলেও মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। একদিনের বৃষ্টিপাতে অন্তত ৩ দিনের লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কাশেম জানান, সোমবার রাতের কালবৈশাখীর ঝড়ে মৌসুমী সবজি ও কৃষিক্ষেতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে সবজির বাজারে বড় কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
বিশিষ্ট পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিমের মতে, এই বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ী বনাঞ্চলের উদ্ভিদগুলো আরো সবল হয়ে ওঠবে, নতুন লতাপাতা গজিয়ে ওঠবে। এতে দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।
এই বৃষ্টিপাতের ফলে কক্সবাজারের ভুগর্ভস্থ পানীয় জলের মজুদের উপর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশিষ্ট ভুতত্ত্ববিদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী। তিনি বলেন, প্রতি বছর খরা মৌসুমে কক্সবাজার শহরের একাংশের ভুগর্ভস্থ পানীয় জলে জনস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত লবণ ও ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যায়। আর বৃষ্টিপাত হলে সেই মজুদগুলো পুনরায় রিফিল হয়ে পানিতে ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা কমে আসে।
এই বৃষ্টিপাতের ফলে বঙ্গোপসাগরের রেডটাইড বা লাল জোয়ার পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে বলে আশা করেন কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, গত ৬ দিনে দুই বার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গড় তাপমাত্রাও কমেছে। এরফলে ক্ষতিকর এলগাল বøুম মিলিয়ে গেছে। যার কারণে কক্সবাজার উপকুলে বিষাক্ত লাল জোয়ার আচড়ে পড়ার আশংকা আর নেই।
কমেন্ট করুন