চীনের সিনোফার্ম থেকে আসা ৫ লাখ ডোজ টিকা আগামী সপ্তাহ থেকে প্রয়োগ শুরু হবে এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘সম্মুখসারির যোদ্ধারা’ অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আগামী ২৫ অথবা ২৬ তারিখ থেকে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে পারব। সেই পরিকল্পনা মোটামুটি দাঁড় করানো হয়েছে।”
দেশে আরও টিকা আসার বিষয়ে অগ্রগতির খবর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে ভালো খবর খুব শিগগিরই আসবে। আমরা টিকা নিয়ে অনেক দেশের সঙ্গে কথা বলছি। অনেক জায়গায় ভালো অগ্রগতি হয়েছে। ফাইনাল হলে আপনারা জানতে পারবেন। কিন্তু ভালো খবর হয়ত সামনে আপনাদের আমরা দিতে পারব।”
মহামারীর প্রথম ঢেউ সামাল দেওয়ার মধ্যেই গত বছরের নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
দুই চালানে সেরাম ইনস্টিটিউট ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে। তাতে ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা জাগায় এপ্রিলে সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
এর অংশ হিসেবে এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার। চীনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ১২ মে ঢাকায় পৌঁছায়।
পরদিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহামারী সামাল দিতে বিভিন্ন উৎস থেকে আরও এক কোটি ডোজ টিকা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই টিকা শিগগিরই দেশে আসতে শুরু করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কয়েক কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে, যা তারা প্রয়োগ করছে না। সেখান থেকে একটি অংশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চেয়েছে। পাশাপাশি টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।
রাশিয়া ও চীন রাজি হলে তাদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশেও যাতে উৎপাদন করা যায়, সেজন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের কাজ সেরে রেখেছে সরকার। তবে দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরও সময় লাগবে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার এ বিষয়ে বলেন, এখনও দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে চীনের সিনোফার্মের টিকা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
“এখন আমাদের চেষ্টা থাকবে টিকা ক্রয় করে মানুষকে দেওয়ার। এটাই সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হবে। টিকা তৈরি করার সময়ের ব্যাপার। আমি মনে করি খুব তড়িৎ গতিতে টিকা তৈরি করা সম্ভব নয়, যদি এক্সিস্টিং কোনো ফ্যাসিলিটিজ থাকে; আর ফ্যাসিলিটিজ না থাকলে আরও বেশি সময় লাগবে।”
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এবিএম খুরশীদ আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চীন থেকে পাওয়া উপহারের টিকা বিভিন্ন মেডিকেল, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জানিয়েছে।
কমেন্ট করুন