ঈদ যত নিকটে আসছে, দূর-দূরান্তের সাধারণ মানুষ নানা কৌশলে শহর ছাড়ছে। বেড়েছে ছোট প্রাইভেট গাড়ির কদর। নগরীর একে খান মোড়, শাহ আমানত সেতু মোড় এবং অক্সিজেন মোড়ে অস্থায়ীভাবে প্রাইভেট গাড়ির স্ট্যান্ড বসিয়ে দূরপাল্লার যাত্রী আনা-নেয়া করা হচ্ছে। এছাড়া কেউ কেউ অনলাইনের মাধ্যমেও দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন।
এসব প্রাইভেট গাড়ির সিটগুলো ছোট এবং একটার সাথে আরেকটি লাগোয়া হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগও নেই। চালক এবং যাত্রীরাও এ বিষয়ে উদাসীন। গাদাগাদি করে বসে তারা যাচ্ছেন গন্তব্যে। সামাজিক দূরত্ব কিংবা গাড়ি স্যানিটাইজ দূরের কথা অনেকেই মাস্ক পর্যন্ত পরছেন না। করোনা মহামারির কারণে দেশে যে লকডাউন চলছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার যে নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে এসব গাড়িতে তার ছিটেফোঁটোও মানার প্রবণতা নেই।
গতকাল রবিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বন্দর নগরীর প্রবেশদ্বার একে খান মোড় সংলগ্ন এলাকায় মাইক্রো, হায়েছ, প্রাইভেট কার, প্রভোক্স, স্টেশন ওয়াগন ইত্যাদি ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। এই স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে কয়েক মিনিট অন্তর ছাড়ছে একেকটি গাড়ি। ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকার লোকাল যাত্রী তোলা হচ্ছে। সব সিট পূর্ণ হলেই ছাড়ছে গাড়ি।
আলাপকালে একাধিক গাড়ির চালক ও হেলপার পূর্বকোণকে জানান, তারা ঢাকায় প্রাইভেট যাত্রী নিচ্ছেন প্রতিজন দেড় হাজার টাকায়। হায়েছ-মাইক্রোবাসের ভাড়া প্রতিজন এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। তবে এসি চালানো হলে ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে। কুমিল্লার ভাড়া জনপ্রতি ৭০০ টাকা এবং ফেনী জনপ্রতি ৫০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাখ্যায় তারা বলেন, এখান থেকে যাত্রী নিয়ে কুমিল্লা কিংবা ফেনীতে গেলে আসার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই ভাড়া একটু বেশি না নিলে পোষায় না।তারা জানান, যেহেতু প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে দূর-দূরান্তে যাচ্ছে পুলিশও খুব একটা কিছু বলে না।
দেখা গেছে, শুধু হালকা যানবাহন নয়, ভারী ও পণ্যবাহী পরিবহনে করেও অনেকেই দূর-দূরান্তের জেলায় ছুটছেন। চট্টগ্রাম বন্দর হতে পণ্য নিয়ে যেসব কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, লরি অলংকার মোড় হয়ে শহর হতে বের হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীরা সেসব গাড়ি দেখলেও কাছে ছুটে যাচ্ছে। কোন কোন গাড়ির চালক যাত্রীর তোয়াক্কা করছে না। তবে কেউ কেউ যাত্রী দেখে থামছে। গন্তব্য জেনে দরদাম করে চালকের পাশের সিটে এক বা দুইজন যাত্রী তুলে নিচ্ছে। তবে এসব যাত্রীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা কম। যেসব ট্রাক চট্টগ্রামে পণ্য খালাস করে চলে যাচ্ছে কর্ণেলহাটের ওইদিকে গিয়ে অনেকেই সেসব খালি ট্রাকে উঠে যাচ্ছে। যে যেভাবে পারছে গন্তব্যে ছুটছে।
শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাড়ে গোল চত্বরেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। এখান থেকে বিভিন্ন উপজেলার বাস নিয়মিত ছাড়ছে। কক্সবাজারে জন্য কোন বাস না ছাড়লেও হায়েছ-মাইক্রো ছাড়ছে। নন এসি মাইক্রোতে কক্সবাজারের ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ টাকা। গাড়ি এসি হলে ভাড়া একটু বেশি। অনেকেই সাতকানিয়া লোহাগাড়ার বাসে করে গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি পরিবর্তন করে চকরিয়া-কক্সবাজার যাচ্ছেন। নগরীর অক্সিজেন মোড়ের চিত্রও প্রায় একই রকম। এখান থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাস সার্ভিস চালু আছে। তবে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ির যাত্রীরা প্রাইভেট মাইক্রোবাস, হায়েছ এবং প্রাইভেট কারের মত ছোট গাড়ির উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ উপজেলার বাসে করে গিয়ে গাড়ি পরিবর্তন করেও গন্তব্যে যাচ্ছে।
সচেতন মহলের অভিমত, যারা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঈদ করতে কিংবা অন্য প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন তারা প্রকারান্তরে নিজের পরিবারকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। নিজেদের ভালো কেউ বুঝতে চাইছে না। হতাশার বিষয় হলো এতো দেখেও কেউ শিখছে না। মানুষ বেপরোয়া হয়ে গেছে।
কমেন্ট করুন