কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে। এতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কঠোর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এর পাশাপাশি সীমান্তে বিজিবির টহল সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে।
গেল এক সপ্তাহে ৫০ জনের অধিক নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ইউএনএইচসিআর।
এদিকে, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
বিজিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গেল ৪ মাসে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় ১৪৭ জন রোহিঙ্গা। তাদের বিজিবির কক্সবাজার ও টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সীমান্তে প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠায়। ফেরত পাঠানোর মধ্যে পুরুষ ১০৫ জন, নারী ২৮ জন ও শিশু ১৪টি। গেল ৪ মাসের মধ্যে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। যার সংখ্যা ছিল ৬২ জন।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মোট ১৬ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তারমধ্যে টেকনাফে ৭ জন ও কক্সবাজারে ৯ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মোট ১৩ জন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তার মধ্যে টেকনাফে ১০ জন ও কক্সবাজারে ০৩ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
মার্চ মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ৫৬ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তারমধ্যে টেকনাফে ৪৮ জন ও কক্সবাজারে ০৮ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
এপ্রিল মাসে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না করলেও টেকনাফ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত দিয়ে ৬২ জন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। যার মধ্যে ৫২ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৫টি শিশু। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
কথা হয় গত ২৯ এপ্রিল টেকনাফে শালবাগান ক্যাম্পে আসা মিয়ানমারের মংডুর বড় গর্জের বিল এলাকার সোনা আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে ৪ বছর ৫ মাস ৫ দিন কারাগারে ছিলাম। এরপর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মিয়ানমার সরকার জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। এরপর গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে এসেছি। প্রথমে মিয়ানমারের মংডু থেকে শীলখালী, তারপর উনচিপ্রাং হয়ে সাঁতার কেটে বাংলাদেশে চলে আসি। এরপর শালবাগান ক্যাম্পে আসি। এখন শালবাগান ক্যাম্পে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে আছি।’
নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বন্দি অনেক রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। তারা এখন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নানা কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যে রোহিঙ্গাগুলো মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছে তাদের মিয়ানমারেরই থাকার কথা। কিন্তু তারা অনুপ্রবেশ করে এখন বাংলাদেশে ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় পাচ্ছে। এভাবে নতুন করে রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় পায়; তাহলে মিয়ানমারে থাকা অন্যান্য রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে উৎসাহিত হবে।
ফরহাদ ইকবাল আরও বলেন, ‘সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাব; সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে নতুন করে মিয়ানমারের নাগরিক একজন রোহিঙ্গাও যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।’
সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৩৭ জন বিদেশিসহ মোট ২৩ হাজার ৪৭ বন্দিকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে; যারা ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট সহিংসতার আগে ও পরে আটক হয়েছিল।
কমেন্ট করুন