ভারতে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যু। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় তিন হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফলে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে ভারতে করোনাভাইরাসে প্রাণহানি তিন লাখের ঘর ছুঁতে যাচ্ছে।
একদিনে ভারতে সোয়া ২১ লাখ নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আড়াই লাখ মানুষের দেহে রোগ শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট সংক্রমণ দুই কোটি ৬৫ লাখ ছাড়িয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোববারের প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, মে মাসের প্রথম ২২ দিনে ভারতে রেকর্ড ৭৭ লাখ মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় এপ্রিলজুড়ে এ সংখ্যা ছিল ৬৬ লাখের কিছু বেশি, যা মার্চ মাসেও ছিল মাত্র সোয়া ১০ লাখ।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসে করোনায় এখন পর্যন্ত রেকর্ড ৯০ হাজারের বেশি মৃত্যু দেখেছে ভারতবাসী। এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল অর্ধেক, ৪৫ হাজার। আর তার আগের মার্চ মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার।
অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে ভারতে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণের বেশি; একই সময়ে প্রাণহানি বেড়েছে ১৮ গুণের বেশি।
তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকায় কিছুটা আশাবাদী প্রশাসন। ১৮টি রাজ্যে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের বেশি। ১৪টি রাজ্যে এ হার ৫ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে। চারটি রাজ্যে এ হার ৫ শতাংশেরও কম।
৩৮২ জেলার সবগুলো মিলিয়ে সংক্রমণ শনাক্তের হার এখন ১০ শতাংশের কিছু বেশি।
ভারতে মহামারির কারণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে কর্নাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে। তিন রাজ্যেই বাড়ানো হয়েছে লকডাউনের সময়সীমা।
শনিবার সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে। বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোর রয়েছে অনেক রাজ্যে।
ভারতে এ পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে উঠেছেন দুই কোটি ৩৪ লাখের বেশি মানুষ। দেশজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি ও হোম আইসোলেশনে থাকা রোগী আছেন ২৮ লাখের বেশি।
১৩৩ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত এক অথবা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন সাড়ে ১৯ কোটির বেশি মানুষ।
বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এ পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
ঘাটতির কারণে রোববার বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে বন্ধ রয়েছে টিকা কার্যক্রম। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দান শনিবার থেকে স্থগিত রেখেছে দিল্লি সরকার।
করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরের অবস্থান ভারতের। সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে দেশটি।
মহামারির এ পর্যায়ে ভারতে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা মানুষের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী কালো ছত্রাকের সংক্রমণ। মিউকরমাইসিস রোগটিতে এ পর্যন্ত নয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
চিকিৎসা নিলেও রোগটিতে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশের বেশি। যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদেরও অধিকাংশেরই এক অথবা দুই চোখ, এমনকি চোয়াল অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে।
রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে ভারত।
কমেন্ট করুন