রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

মিয়ানমারে ব্যবসায় শনির ছায়া দেখছে টেলিনর

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ৮ মে, ২০২১
  • ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে

ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে সামরিক জান্তা টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বন্ধ করার পর মিয়ানমারে ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে নরওয়ের বহুজাতিক কোম্পানি টেলিনর।

রয়টার্স বলছে, চলতি সপ্তাহে টেলিনর মিয়ানমারে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রাজস্ব হারিয়েছে। অথচ গত বছর কোম্পানির মোট আয়ের ৭ শতাংশ সে দেশ থেকে এসেছিল।

এক দশক আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি যখন সামরিক শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রের পথে চলা শুরু করল, তখন ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিমের হাতেগোনা যে কয়টি কোম্পানি মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছিল, সেগুলোর একটি টেলিনর।

নরওয়ের এ কোম্পানি মিয়ানমারে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী।

টেলিনরের প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেককে বলেন, “আমরা অনেক ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে আছি।”

১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে শত শত মানুষের প্রাণহানির মধ্যে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে বাড়তি নজরদারির ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে ব্রেককে বলেন, “টেলিনর আপাতত ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।”

গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা শুরুর পর মিয়ানমারে বিনিয়োগের জন্য টেলিনর প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন অধিকার কর্মীরা।

সামরিক বাহিনী আবারও মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ক্রিস সিদোতি বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামরিক বাহিনীকে তহবিল যোগায় এমন কর বা নিবন্ধন ফি টেলিনরের পরিশোধ করা উচিত নয়।

“মিয়ানমারে ‘ভালোর চেয়ে খারাপ করছে’ কিনা সে বিষয়ে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না হলে টেলিনরের উচিত সেখান থেকে সরে আসা।”

অবশ্য এসপেন বার্থ ইডের মত ভিন্ন, যিনি ২০১৩ সালে মিয়ানমারে টেলিনরের নিবন্ধন পাওয়ার সময় নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, টেলিনরের উচিত মিয়ানমারে থাকা এবং সুপ্রতিষ্ঠিত একটি বিদেশি কোম্পানি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করা।

টেলিনরের মালিকানায় নরওয়ে সরকারের বাণিজ্য, শিল্প ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ও অংশীদার। ওই মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টেলিনর মিয়ানমারে টানাপড়েনের মুখোমুখি।

তিনি বলেন, করপোরেট সুশাসন বিবেচনায় মিয়ানমারে টেলিনরের বিনিয়োগের বিষয়ে দায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপক দলের। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নরেওয়ে সরকার পরিস্থিতি বিবেচনায় টেলিনরের সঙ্গে বড়জোর আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তা চলমান সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত দল ও আন্দোলনকারীদের দোষারোপ করছে।

টেলিনরের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার নরওয়ের কেএলপি জানিয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকির বিষয়গুলো যাতে চিহ্নিত করা যায়, সেজন্য অভ্যুত্থানের পর থেকে তারা টেলিনরের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

টেলিনরের সিইও ব্রেককে বলেন, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি কোম্পানির সামনে থাকা সঙ্কটগুলোর একটি। এর পাশপাশি রয়েছে নিরাপদে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করা এবং নেটওয়ার্কে তাদের প্রবেশের সুযোগ বজায় রাখা।

“আমরা এই নিক্তির ওপরেই প্রতিটি দিন কাজ করে চলেছি।”

এখন পর্যন্ত এই ‘তাল মিলিয়ে চলার’ নীতিতে টেলিনর মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা স্থায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

“পরিস্থিতি এমন অনিশ্চিত অবস্থায় থাকলে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের ধারণা করা অসম্ভব”, বলেন ব্রেককে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102