রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা। হুমকির মুখে গোটা শ্রমবাজার। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে স্বল্পমূল্যে শ্রম দেয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। এতে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের তালিকা করে এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সুশীল সমাজের।
কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণির মোড়, এ যেন শ্রমজীবীদের হাট। সকাল হলেই জড়ো হন কয়েকশ’ শ্রমিক। প্রতিদিনের মতো কাজের জন্য সেখানে বসে থাকতে দেখা যায় স্থানীয় শ্রমিক মোহাম্মদ ও রোহিঙ্গা শ্রমিক হোসেনকে। স্বল্পমূল্যে হোসেন কাজ করতে চলে গেলেও কাজ পাননি মোহাম্মদ। জানালেন কাজ না পাওয়ার কষ্টের কথা।
মোহাম্মদ বলেন, কম বেতন পেলেও রোহিঙ্গা কাজ করতে চলে যায়। এ কারণে আমরা কাজ পাচ্ছি না।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট। মাছ উঠানামার কাজ করছেন রহিম ও জাহিদ। তারাও বলছেন, রোহিঙ্গাদের দৌরাত্ম্যে তাদের অসহায়ত্বের কথা।
রহিম বলেন, যেখানে একজন শ্রমিকের দিনে মজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা সেখানে রোহিঙ্গারা ৩০০ টাকায় কাজ করতে চলে যাচ্ছে।
জাহিদ বলেন, মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করতে গেলে যেখানে মজুরি ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। সেখানে রোহিঙ্গারা এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যেই কাজ করছে।
শুঁটকি মহাল থেকে শুরু করে রিকশা-ইজিবাইকচালক, হোটেল-রেস্তোরাঁর শ্রমিক হিসেবে সব কাজে জায়গা করে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। ফলে বেকার হয়ে পড়ছেন স্থানীয় শ্রমিকরা।
আক্ষেপ করে এক স্থানীয় শ্রমিক বলেন, ২০০-৩০০ টাকায় রোহিঙ্গা শ্রমিকরা কাজ করছেন। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো কাজ পাইনি।
স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রতিদিন ৬০-৭০ জন করে বের হয়ে শ্রমিকের কাজ করছে। অনেকেই অটোরিকশা চালাচ্ছে, যারা অর্ধেক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করায় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন স্থানীয় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আর ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের তালিকা করে সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সুশীল সমাজের।
কক্সবাজার ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি অনীল দত্ত বলেন, দিনমজুর থেকে শুরু করে আজ সবকিছু রোহিঙ্গাদের দখলে। যারা স্থানীয় তারা রোহিঙ্গাদের দৌরাত্ম্যে বেকার দিনযাপন করছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, যেসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে, অন্তত ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
শ্রমিক সংগঠনগুলো দেয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারের ৮টি উপজেলায় প্রায় ৬ লাখের বেশি শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন।
কমেন্ট করুন