করোনায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ শতাধিক। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২৮ মে পর্যন্ত এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ শতাধিক।
সংক্রমনের পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রোহিঙ্গা মারা গেছেন ৬ জন। রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধগতিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় লোকজনের মাঝে আতংকের পাশাপাশি উদ্বেগ বিরাজ করছে।
রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রশাসনকে রোহিঙ্গাদের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্প গুলোতে লকডাউনের মত পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। গত ২০ মে থেকে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়ার ২/ওয়েষ্ঠ, ২,৪ ও ১৫ নং ক্যাম্পে এবং টেকনাফের ২৪ নং ক্যাম্পে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন চলছে। পাশাপাশি অনান্য ক্যাম্প গুলোতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ রয়েছে।
২০ মে লকডাউন ও বিধি নিষেধ কার্যকরের পরও রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বৈ কমছে না। মূলত এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে, ক্যাম্প অভ্যন্তর ও সংলগ্ন আশপাশের হাট- বাজার গুলোতে রোহিঙ্গাদের যাতায়াত, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন মেনে চলা কোন কিছুতেই উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বিধান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে উখিয়ার পালংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান।
বিশেষ করে ঘনবসতির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ১৫দিনে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিযেছে। অধিক জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে সংক্রমণ ছড়িযে পড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে এক বিজ্ঞপ্তিতে গত বছরের চেয়ে চলতি সময়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা আক্রান্তের তথ্য উদ্বেগ জানান। এ সময়ে আক্রান্তের হার বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ।
সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের স্বাস্থ্য সমম্বয়ক ডা, তোহা ভুইয়া জানান, রোহিঙ্গাদের মাঝে আকস্মিকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সরকার, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতর ১৩ টি সারি আইসোলেটেড ৯৬৪ টি বেড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। আছে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনসহ অনান্য জরুরী সরঞ্জাম। এছাড়াও আরও ৩টি অস্হায়ী আইসোলেশন ইউনিট চালুর প্রক্রিয়াধীন আছে বলে তিনি জানান।
একই সময়ে আক্রান্ত ১১৬৩ জনের মধ্যে উখিয়ার ক্যাম্পে ৯৬৪ জন ও টেকনাফের ক্যাম্প গুলোতে ১৯৯ জন। ২৫ মে পর্যন্ত করোনায় মৃত রোহিঙ্গা ১৭ জন। উক্ত সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৭৯১ জন, চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪০২ জন। ক্যাম্প সংলগ্ন আইসোলেশনে রয়েছে ৩৫৪ জন ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন ৪ জন রোহিঙ্গা। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্তের হার দৈনিক গড়ে ৩৫- ৩৭ জন।
এদিকে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু ক্যাম্প কুতুপালংসহ উখিয়ায় ২৬ টি ক্যাম্পের অবস্থান উখিয়ায়। এতে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের স্বভাবতই উখিয়ার বিভিন্ন স্হানে যাতায়াতও অত্যধিক। এছাড়া এসব ক্যাম্পে জাতিসংঘসহ শতাধিক দেশী বিদেশী এনজিওতে কর্মরত কর্মীদের অধিকাংশ উখিয়ার বিভিন্নস্থানে আবাসিকভাবে অবস্থান করেন।
কারণ যদিও আক্রান্তরা উখিয়ার বিভিন্ন স্হানের ঠিকানা ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন জেলার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত। ২৭ মে পালংখালী ইউনিয়নে যে ৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে ওদের সবাই কিন্তু বিভিন্ন জেলার ক্যাম্পের এনজিও কর্মী। ওসব আক্রান্তদের অনেকে সঠিক তথ্য গোপন করে স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। এব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা না হলে শীঘ্রই উখিয়াকে মহামারী এলাকা ঘোষণা করতে হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা, রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, দিন দিন পরিস্থিতি অবনতিশীল হচ্ছে। উখিয়ায় ২৮ মে পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২১২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০২৬ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ১৬৯ জন,প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন ২৫ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৫ জন। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা উপযুক্ত বেড রয়েছে ৩০টি,রয়েছে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তিনি করোনায় আতংকিত না হয়ে মনোবল শক্ত করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
কমেন্ট করুন