বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গাদের সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
  • ৪০৬ বার পড়া হয়েছে

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে না আসায় উখিয়া উপজেলায় আগামী ৬ জুন পর্যন্ত কিছু এলাকায় রেডজোন ও লকডাউন বাড়ানো হলেও কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। দূর পাল্লার বাস ব্যতীত সকল ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। উখিয়ার কোথাও লকডাউনের বালাই নেই। আরো নাজুক অবস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও।

গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১২ দিন কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয় ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তারপরও করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি হার অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৫ জন, উখিয়ায় ১০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে গত ১ জুন থেকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৪ টি ওয়ার্ডে রেডজোন ও পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন চলছে ৬ জুন পর্যন্ত।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, এর আগে উখিয়ায় ১৯ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। রাজাপালং ইউনিয়নের ৪ টি ওয়ার্ডে রেডজোন কার্যকর করা হয়েছে। রেডজোন ও লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উখিয়ার ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪ নম্বর ক্যাম্পকে ১০ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। তা আরও ছয়দিন বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পে চিকিৎসা, খাদ্য-পণ্যসহ জরুরি কার্যক্রম ছাড়া অন্য কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকায় লকডাউন পালন হচ্ছে ঢিলেঢালা ভাবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ যতক্ষণ মাঠে থাকে ততক্ষণ লকডাউন কার্যকর থাকে। এরপর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষ্মণই নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবস্থা আরও নাজুক। ঘনবসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। এরমধ্যে রোহিঙ্গা ১২৭৭ জন।যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। একই সময়ে উখিয়ায় আক্রান্ত ১৩২৮ জন। এদের ৭০ শতাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরের জেলার বিভিন্ন এনজিও কর্মী বলে জানা গেছে। এ পর্যন্ত করোনায় রোহিঙ্গা মারা গেছে ১৭ জন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, ‘গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা থাকত তিন থেকে পাঁচজনের মধ্যে। এখন দৈনিক গড়ে ৮০ জনের বেশিও শনাক্ত হচ্ছে।’

তিনি জানান, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা নিয়মিত ভোরে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসছে। এছাড়া শরণার্থীদের মানবিক সেবায় যুক্ত এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছেন।’

ডা. অনুপমের মতে, এনজিও কর্মীদের অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে (কক্সবাজারের বাইরের জেলায়) গিয়েছিলেন, এখন ফিরে এসে ক্যাম্পে যাতায়াত করছেন। তাদের কারও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।’

উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জরুরী রেশন, ঔষধ সামগ্রী প্রতিটি ক্যাম্পে সমন্বিতভাবে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন একই স্হান থেকে বিলি করার ব্যবস্হা নেয়া যেতে পারে। রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে এসব করে অন্তত ৯০ ভাগ বাংলাদেশী এনজিও কর্মীদের থেকে রোহিঙ্গাদের আলাদা রাখতে হবে।

অন্যথায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধ করা কঠিন হবে। প্রতিদিন এই তিন এলাকা থেকে কয়েক হাজার এনজিও কর্মীর ক্যাম্পগুলোতে যাতায়াত রয়েছে। তা সাময়িকের জন্য বন্ধ করা খুবই জরুরী বলে তিনি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102