করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে চলছে লকডাউন। কিন্তু এই লকডাউন কোনোভাবেই মানছেন না রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পে অবাধে ঘোরাফেরা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা বা মাস্ক ব্যবহার রোহিঙ্গাদের রয়েছে চরম অনীহা।
লকডাউন করা উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্প ২ ডব্লিড’র বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, এখন ক্যাম্পে লকডাউন দিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু ঘরে তীব্র গরম; থাকা যাচ্ছে না। কারণ ক্যাম্পের ঘরগুলো ত্রিপলের তৈরি। এতে গরমের কারণে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। এরপর ওপর মানুষও বেশি, ঘিঞ্জি পরিবেশ। তাই ঘরে থাকতে না পেরে দোকানপাটে বসে আছি। প্রশাসন দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলেছে; কিন্তু বন্ধ তো রাখা যাচ্ছে না। গরমে ঘর থেকে মানুষজন বের হয়ে এসে দোকানে বসে এবং সবাই মিলে গল্প করি।
শনিবার (২২ মে) সরজমিনে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্প ২ ডব্লিউ, ক্যাম্প ৩, ক্যাম্প ৪-এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন দেয়া হয়েছে এই ক্যাম্পগুলো। প্রবেশদ্বারে টাঙানো হয়েছে লকডাউনের সাইনবোর্ড। যার জন্য প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কড়া পাহারা। আর যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য রয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। কিন্তু প্রবেশদ্বারে এই অবস্থা দেখা গেলেও ক্যাম্পের ভেতরে দৃশ্য ভিন্ন।লকডাউনের মাঝে ক্যাম্পগুলোতে অবাধে ঘুরাফেরা করছে রোহিঙ্গারা। দোকানপাট খুলে দিচ্ছেন আড্ডা। নেই স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহার। একই সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে আছে রোহিঙ্গা শিশুরা।
ক্যাম্প ২ ডব্লিউ, ডি-৪ ব্লকের বাসিন্দা হামিদ হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে প্রশাসন মাস্ক ব্যবহার ও ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। এছাড়াও ঘরের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখতে এবং ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলতে নিষেধ করেছে। কিন্তু ক্যাম্পে তো প্রচণ্ড গরম; এই গরম সহ্য করতে না পেরে ঘরের বাইরে চলে আসি। এরপর পুলিশ এসে বাইরে দেখলে মাস্ক ব্যবহার করতে বলে তাড়িয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর করার কিছুই নেই; এই লকডাউনে গরম সহ্য করতে না পেরে ঘরের বাইরে চলে আসি।
ক্যাম্প ২ ডব্লিউ ইস্ট ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন বলেন, ক্যাম্পে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ার কারণে লকডাউন দিয়েছে; এটা মেনে নিয়েছি। ক্যাম্পে তো মানুষ বেশি; এই হিসেবে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে এটা মেনে নিতে পারছি না। ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ, একে অপরের সঙ্গে বসতে হচ্ছে, থাকতে হচ্ছে, এরপর গরমও বেশি।
ক্যাম্প ৪ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, লকডাউন তো ক্যাম্পের জন্য নতুন একটা বিষয়। প্রশাসন অনেক নির্দেশনা দিয়েছে; এগুলো নতুন নতুন হওয়াতে মানতে পারছি না। কিন্তু এই নির্দেশনাগুলো শুধু আমার নয়; ক্যাম্পের সব রোহিঙ্গার মেনে চলা দরকার।
এদিকে, ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণায় সীমাবদ্ধ। ক্যাম্পের মধ্য নেই কোনও প্রচারণা। তবে সংক্রমণ রোধে লকডাউন করা ক্যাম্পগুলোর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সচেতন করা হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।
মো. তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, ক্যাম্পগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তাই ৫টি ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকরে এপিবিএন কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দায়-দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের। অন্যান্য সবার সহযোগিতায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের লকডাউন মানাতে সচেতন করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। লকডাউনের বিষয়গুলো বোঝানো হচ্ছে, টহলরত মাইকিং করা হচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গারা লকডাউনের বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৮ জন এবং এদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫শ’রও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকের।
কমেন্ট করুন