স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীর মাত্র ১৪টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি থাকছেন। অথচ অধিদপ্তরের তালিকার বাইরে আরও ১৪টি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১১টিতেই করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এসব হাসপাতালের সাধারণ শয্যা এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রায় সব শয্যা রোগীতে পূর্ণ।
গতকাল রোববার দৈবচয়নের ভিত্তিতে রাজধানীর ১৪টি হাসপাতালে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। ১১টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৪৫৭টি সাধারণ শয্যা এবং ১০৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪৬টি সাধারণ শয্যায় এবং ১০৩টি আইসিইউতেই করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। অবশ্য গতকাল মোট ১৯টি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলেছিল প্রথম আলো। এর মধ্যে ১৬টিতেই করোনা রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল বিকেলে প্রথম আলোর খোঁজ নেওয়া তিনটি হাসপাতালকে তাদের তালিকায় যুক্ত করে। আর আজ সোমবার আরও দুটি হাসপাতালকে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন নতুন ভর্তি রোগী, সুস্থ ও মৃত্যুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের পাঠানো তথ্য (হাসপাতালে ভর্তি রোগী) করোনাসংক্রান্ত রোজকার বুলেটিনে যুক্ত করছে না। মৃত্যুর তথ্য যুক্ত করছে কি না, সেটিও তাঁরা নিশ্চিত নন। সরকারি সংস্থার বাইরে বিশেষ করে গণমাধ্যমকে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর তথ্য দিতেও নিষেধ করা হয়েছে।
সরকারের তালিকার বাইরেও যে ১১টি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে, সেগুলো হলো বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, সিটি হাসপাতাল, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস (বিআইএইচএস) জেনারেল হাসপাতাল, বেটার লাইফ হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্র হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল,ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিল ও কাকরাইল শাখা এবং মনোয়ারা হাসপাতাল।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ কোনোটাই ফাঁকা থাকছে না। শয্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন ও জনবলের স্বল্পতায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২৪টি আইসিইউ এবং ৭৭টি সাধারণ শয্যার সবই রোগীতে পূর্ণ। হাসপাতালের উপপরিচালক তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা ফাঁকা হওয়া মাত্রই নতুন রোগী চলে আসছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৪টি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর তথ্য যুক্ত করে। এর মধ্যে গতকাল রোববার এবং আজ সোমবার ৫টি হাসপাতাল তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো হচ্ছে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, গ্রীন লাইফ হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল।
আগে থেকে যে ৯টি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে—আসগর আলী হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভার কেয়ার হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল, এএমজেড হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল,
বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) পরিচালক রোবেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, যেসব হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য ডেজিকনেটেড (নির্ধারিত) ছিল সেগুলোই তালিকাতে দেখানো হচ্ছিল। নতুন অনেক হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরে সেগুলো থেকে রিপোর্ট আসায় তাদেরও তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া গেলে সেগুলোও যুক্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া করোনাবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে শুরু থেকেই ঘাটতি রয়েছে—এমনটা বারবার বলে আসছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র নয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকা অব্যবস্থাপনারই অংশ।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, সব হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য না আসায় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাচ্ছে না। শুরু থেকেই বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়নি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য না পেলে ভবিষ্যতে রোগী ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিকল্পনায় বিশাল সমস্যা হবে।
কমেন্ট করুন