চারদিন ধরে করোনা আক্রান্ত ইউনুছ আলী ( ৫৮)। কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়ার কবরস্থান রোড়ের নিজ বাড়িতে থেকেই নিচ্ছেন চিকিৎসা। কিন্তু হঠাৎ করে বুধবার দুপুরে তাঁর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। দরকার পড়ে অক্সিজেনের। কিন্তু কেনার সামর্থ্য নাই। তখনই এক প্রতিবেশীকে বিষয়টি জানায় ইউনুছের পরিবার। সেই প্রতিবেশী কালবিলম্ব না করেই ফোন করলেন কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংকের মোবাইল নম্বরে। তখন এই প্রান্তের সবাই দুপুরের খাবারে ব্যস্ত। তবুও কল পেয়েই খাবার রেখেই সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক ইসতিয়াক আহমদ জয় ও স্বেচ্ছাসেবক শাকিল মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটলেন ।
১০ মিনিটেই রোগীর ঘরে অক্সিজেন পৌঁছে দিলেন। অক্সিজেনে দেখেই মুহুর্তেই হাসি ফুটল পরিবারের সকলের চোখেমুখে। তার আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কল করে বিনামূল্যে অক্সিজেন পেয়েছেন মোহাজের পাড়ার করোনা আক্রান্ত মো. জালাল। এর আগের দিনের গভীর রাতে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর উদয় শংকর পাল মিঠুর বাড়িতে।
এবিষয়ে উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, আমার বৃদ্ধ মা করোনা আক্রান্ত। বাসাতেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। হঠাৎ করে সেদিনে রাতে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক জানান জরুরীভাবে অক্সিজেন দিতে হবে। কিন্তু শহরের কোথাও অক্সিজেন মিলেনি। তখনই আমি অক্সিজেন ব্যাংকে ফোন করি। ফোন করার ৫ মিনিট পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি অক্সিজেন নিয়ে আসে। সময়মত অক্সিজেন দিতে না পারলে হয়ত আমার মাকে বাঁচানো সম্ভব হত না। আমি সংগঠনটির সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এমন সহযোগীতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেননি নুরুল আমিন। শুধু মিঠু, পুষণ কিংবা আমিন নয় কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন সেবা নেওয়া প্রতিটি পরিবার। তাদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে সমাজের অনেক বিত্তবান এসে দাড়িয়েছে সংগঠিনটির পাশে।
সূত্র জানায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা মানুষের জীবন বাঁচাতেই গঠে উঠেছে ‘কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংক। ১ জুলাই ১৬ জন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটির বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক ৪০ ছাড়িয়ে গেছে। ১৪ টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটির পাশে দাড়িয়েছে কক্সবাজারের অনেক বিত্তবানরা। বর্তমানে অক্সিজেন ব্যাংকের সিল্ডিন্ডার সংখ্যা ২৪। এই ১৪ দিনে ৫২ জনকে সঠিক সময়ে বিনামূল্য অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংকের সমন্বয়ক শাখাওয়াত হোসেন তুর্য বলেন, অক্সিজেন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে। প্রয়োজনের সময়েই অক্সিজেন দরকার।আমরা সঠিক সময়েই বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে সাধারন মানুষের পাশে থাকতে চাই। আর কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংকের প্রধান সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, আমরা রাত দিন ২৪ ঘন্টায় সেবা দিয়ে যাব। শহরের ১২ টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে প্রায় ৭ টি ওয়ার্ড থেকে অক্সিজেন ব্যাংকের জরুরী নাম্বারে ফোন আসে। কখনও গভীর রাতে, কখনো বা বৃষ্টিমুখর ভোর রাত্রিতে, অক্সিজেন ব্যাংকের হট লাইনে ফোন করার সাথে সাথেই কর্মীরা অক্সিজেন নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। সঠিক সময়ে অক্সিজেন পৌঁছে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছেন, মোঃ জালাল, নুরুল আমিন চৌধুরী, ইউসুফ মিয়া, পুষণ আঞ্জুমসহ অন্তত ৪০ জন।
তিনি আরো বলেন, অক্সিজেনের অভাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে আমাদের প্বাশবর্তী দেশে যে হারে মৃত্যুবরণ করেছে সেভাবে যেন আমার শহরে মৃত্যুর মিছিল না হয় সেই ভাবনা থেকেই অক্সিজেন ব্যাংকের যাত্রা। বর্তমানে আমরা পৌর শহরে অক্সিজেন সরবরাহও করলেও এ মাসের শেষভাগে সদর ও রামুতে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে।
কমেন্ট করুন