শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

আরব বিশ্বের বিভক্তি দুর্ভাগ্যের : ফিলিস্তিনি দূত

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১
  • ৩৩১ বার পড়া হয়েছে

গাজায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরব দেশগুলোর বিভক্তি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আরব বিশ্ব বিভক্ত এবং এই বিভক্তি অনেক দিনের। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

“আরবদের মধ্যে বিভক্তি আমাদেরকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনিদেরকে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দুর্বল করে দিচ্ছে।”

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের একটি এলাকা ও আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধির এক পর্যায়ে হামাস ইসরায়েলের স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ছুড়লে ইসরায়েলও পাল্টা গাজায় বিমান হামলা শুরু করে।

দুই পক্ষের সংঘর্ষ এরই মধ্যে দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে; এতে শতাধিক নারী-শিশুসহ গাজার অন্তত ২২৭ বাসিন্দা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলি হামলায় সোচ্চার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর শক্ত অবস্থান না দেখে হতাশ রামাদান।এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, অন্যদের দিকে না তাকিয়ে তার দেশের জনগণ স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় লড়াই চালিয়ে যাবে। “আমরা এই কারণে বসে থাকতে এবং কাকুতি-মিনতি করতে পারি না। আমাদের উচিৎ বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া।”

ফিলিস্তিনি দূত আরও বলেন, “আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। যারা আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চায়, তাদেরকে স্বাগত, আর যারা আমাদের সঙ্গে থাকবে না, তাদেরও কিছু বলব না। আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা পৃথিবীতে মানবিক মূল্যবোধের ‘রক্ষক’ হিসাবে নিজেদের দাবি করে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বিষয় এলে তারা মানুষের জীবন ও মানবিক মূল্যবোধ ভুলে যায়। এ দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানালেও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে রকেট হামলা বন্ধের উপর জোর দিচ্ছে।

চলতি সংঘাত প্রসঙ্গে রামাদান বলেন, “এটা কেবল ইসরায়েল কিংবা হামাসের দ্বন্দ্ব নয়। এটা ফিলিস্তিনি জনগণের এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসকে কীভাবে বিবেচনা করে, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সারা বিশ্বের মুসলিম হামাসকে কীভাবে দেখে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা হামাসের অবস্থানকে শ্রদ্ধা জানাই।”

ফিলিস্তিনিদের অধিকার গত ৭৩ বছর ধরে খর্ব করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার। অন্যান্য জাতির মতো ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে।”

ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কখনোই আসবে না।

স্বাধীনতার সেই লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রত্যাশা করে রামাদান বলেন, “ফিলিস্তিনের শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী নির্বিশেষে সবার রক্ত ঝরছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

“বিশ্বকে কেবল মুখে বললে হবে না, পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা কাজ দেখতে চাই। কারণ নিন্দা, বিবৃতি আর আলোচনায় কিছু হচ্ছে না। ইসরায়েল এসবে কান দিচ্ছে না, মানছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরোধ ও দাবি।”

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কখনোই আসবে না। “যন্ত্রণায় থাকলে সবাই থাকবে, শান্তিতে থাকলেও একসঙ্গে থাকবে।”

এক প্রশ্নের উত্তরে ফিলিস্তিনি দূত বলেন, “আমাদের সমস্যা ইহুদিদের সঙ্গে নয়। আমাদের সমস্যা জায়নিস্টদের সঙ্গে। কারণ তারা কেবল ফিলিস্তিনিদের নয়, সারা পৃথিবীর শত্রু।

“অনেক ইহুদি ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে। কিছু ইহুদি ইসরায়েলের অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেয় না। আজ আমেরিকার ২৫ জন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান ইসরায়েলের বিপক্ষে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কারণ আমরা এমনভাবে প্রিয়জনদের হারাচ্ছি, যা আগে কখনও ঘটেনি।”

ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্টদূত রামদান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102