বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

আয় কমেছে ১৬%

Reporter Name
  • আপডেট করা হয়েছে শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে

করোনার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয় প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গেছে। এ আয় আরও অনেক কমে গিয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও আগের অবস্থায় ফেরেনি। আয় কমে যাওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো তাদের খরচও কমাতে বাধ্য হয়েছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে খরচ কমাতে হয়েছে ৮ শতাংশ।

এসডিজি বাস্তবায়নে গঠিত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক একটি খানা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ৬০০ খানার ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। চর, হাওর, উপকূল, বস্তি, দলিত, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, প্রবাসফেরত, বিপন্ন নারী এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৯ শতাংশ পরিবার আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে সাড়ে ৭৮ শতাংশ পরিবার এখনো সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাঁরা ভেবেছিলেন, এই সংকট কাটাতে গড়ে আরও ১৩ মাস সময় লাগবে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে তাদের আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। তাতে এসব প্রান্তিক মানুষগুলোর বড় অংশ ঋণের জালে আটকে পড়েছেন। করোনার মধ্যে টিকে থাকতে প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবারকে ঋণ করতে হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ করতে তাদের দুই বছর সময় লাগতে পারে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী। তাই করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য একটি সামাজিক সংহতি তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে সরকার, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি পর্যায়ের সহায়তার সুযোগ থাকবে।

অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চলমান অতিমারি জাতীয়ভাবে যে প্রভাব ফেলেছে, এর বেশি বিপদে ফেলেছে প্রথাগত বিপন্ন গোষ্ঠীকে। এমনকি যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না, তারাও সংকটে পড়েছেন। যেমন প্রবাসফেরত মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা। তাই এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে সহায়তার দেওয়ার জন্য দু-তিন বছরের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারের সম্পদের জোগান দিতে একটি সামাজিক সংহতি তহবিল তৈরির সুপারিশ করেছেন তিনি। এতে সরকারের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা উচিত বলেও মত তার। এ ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ দেন। এই ধরনের তহবিলে কে কত টাকা দিচ্ছে, কোথায় কত খরচ হচ্ছে—তা মুহূর্তেই হালনাগাদের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশও করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

জরিপের ফল অনুযায়ী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিংহভাগ পরিবারেই করোনার কারণে অন্তত একজন কাজ হারিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি—৯৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী পরিবারে একজন কাজ হারিয়েছেন। জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আয় কমেছে চর এলাকার পরিবারে। সেখানে গত এক বছরে প্রায় ২১ শতাংশ আয় কমেছে। করোনার আগে ওই সব পরিবারে মাসিক গড় আয় ছিল ১২ হাজার ২০৭ টাকা, এখন তা ৯ হাজার ৬৩৫ টাকায় নেমেছে। একইভাবে প্রবাসী আয় আছে, এমন পরিবারে গড় আয় ৩৫ হাজার ৩২৯ টাকা থেকে কমে ২৮ হাজার ২৬৮ টাকায় নেমেছে। অন্যদিকে করোনার আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী পরিবারের গড় আয় ছিল ২৫ হাজার ৩৫ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে হয়েছে ২০ হাজার ৪০১ টাকা।

জরিপে অন্তর্ভুক্ত ১০টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষ। তাদের জন্য বাড়তি আয় ও ঋণ পরিশোধে সহায়তা দরকার।

 

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102