মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

ইন্টারনেটের আওতায় মহেশখালীর ৫০ হাজার মানুষ

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ১৬ মে, ২০২১
  • ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিচ্ছন্ন দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। জেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া উপজেলার মাঝের এলাকায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা এ দ্বীপ এখন আর দুর্গম নেই। বদলে গেছে এখানকার জীবনযাত্রা। ডিজিটাল উন্নয়নের সব সুবিধাই পাচ্ছেন দ্বীপবাসী।

মহেশখালীর ঘরে ঘরে এখন উচ্চগতির উন্টারনেট। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও কৃষিসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা ছুটে আসছে অপটিক্যাল ফাইবারে ভর করে। আর তা সম্ভব হয়েছে সরকারের ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্পের কারণে।

ছোট-বড় তিনটি দ্বীপের সমন্বয়ে একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে মহেশখালী। জাগো ফাউন্ডেশনের দূরশিক্ষণ প্রকল্পের কারণে ঢাকার অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে পড়াশোনার সুযোগও পেয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। নানান রোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শও পাচ্ছেন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। মহেশখালীকে এরইমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’। দ্বীপের ৫০ হাজার মানুষ এখন ইন্টারনেটের আওতায়।

শুধু পড়াশোনা কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন তা নয়। ইন্টারনেটের করণে অনেক ‍যুবক এখানে যুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়। অনলাইনে গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত শুঁটকি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘ই-বিজনেস সেন্টার’। ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে গ্রাহকের কাছে শুঁটকি পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি মহেশখালীতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও তাদের কথা অনলাইনে জানতে পারছেন ও সহজে শুঁটকি কিনতে আসতে পারছেন।

স্থানীয় আদিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, কম্পিউটারের মাধ্যমে ঢাকার আপাদের কাছে পড়ালেখা করছি। স্যারেরা আমাদের বাংলা, ইংরেজি, অংকসহ সব পড়ান। এখন করোনার মধ্যে বাসা থেকেও পড়তে পারছি। কোনও দরকার হলে ফোনের মাধ্যমে স্যারদের কাছ থেকে সরাসরি জেনে নেওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের পরিষেবাগুলো নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের উৎপাদিত মাছ, শুঁটকি ও পান বিক্রির জন্য ই-কমার্সের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন দ্বীপের তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

দ্বীপের মানুষের উন্নয়ন ও আধুনিক দ্বীপ গড়ার লক্ষ্যে ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে দ্বীপে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে সরকার। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী দ্বীপের ৩ লাখ বাসিন্দার জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো দ্বীপকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার পাইলট প্রকল্প হিসেবে মহেশখালী দ্বীপকেই বেছে নিয়েছিল।

২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালীকে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপরই বদলে যেতে থাকে দ্বীপের অবকাঠামো। প্রকল্পটির কারণে দ্বীপের বাসিন্দারা এখন সবিমিলিয়ে ১৫০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন।

প্রকল্পের মাধ্যমে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারও স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সব সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জাহিদ এম ফিরোজ বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা হেলথ ইউনিটগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। যার মাধ্যমে মানুষ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, আগে কক্সবাজার থেকে মহেশখালীতে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের জন্য ২৫ মিটারের একটি টাওয়ার ছিল। যার ক্ষমতা ছিল সামান্য। সেই টাওয়ারে কিছু যন্ত্রপাতি বসিয়ে আমরা প্রথমে কিছুদিন চালাই। পরে ৫০ মিটার উচ্চতার নতুন টাওয়ার বসানো হয়। এতে ৩৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইলেও সমস্যা হবে না। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এখন বিটিসিএল এগুলোর দেখাশোনা করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102