গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম এবং মার্চেন্টের পাওনা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে’ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশন অনুসন্ধানের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানিয়েছেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম।
আরিফ সাদেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভ্যালির বিষয়ে কমিশনে আগে থেকেই একটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে আরেকটি নতুন অভিযোগ পাওয়ার পর তা দুই সদস্যের টিমের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অণুবিভাগ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগটি ‘সুনির্দিষ্ট’ জানিয়ে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট হওয়ায় এখন অনুসন্ধান কার্যক্রম গতিশীল হবে।” এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে গত ৪ জুলাই দুদক চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির সঙ্গে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাত পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদনও যুক্ত করে দেওয়া হয়।
দুদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে একটি প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “গত ১৪ মার্চ দেখা যায়, ইভ্যালি ডটকমের মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
“উক্ত তারিখে ইভ্যালি ডটকমের গ্রাহকের নিকট দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকের নিকট থেকে অগ্রিম হিসেবে গৃহিত ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির নিকট কমপক্ষে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নিকট সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা “ দুদকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, “ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা উক্ত কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।
“তদুপরি গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকার কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।” বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।
কমেন্ট করুন