বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

জেলায় প্রধান সড়কে কড়াকড়ি, স্বাস্থ্যবিধি উধাও অলিগলিতে

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১
  • ৩৩৩ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার জেলার প্রধান সড়ক গুলোতে কড়াকড়ি থাকায় যানবাহন সহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম হলেও উপ-সড়ক এবং অলিগলিতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। বুধবার বিধি-নিষেধের ৭ম দিনেও সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে জেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। গতকাল ৭ জুলাই কক্সবাজারে ৬২৪ জনকে পরীক্ষা করে ১৭৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। এটি জেলায় সর্বোচ্চ। প্রধান সড়ক সহ অভ্যন্তরীণ অলিগলিতে অসচেতন মানুষের উপস্থিতি গতিরোধ করা না গেলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সচেতন সাধারণ মানুষের মতে, রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি আগের তুলনায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইতিমধ্যে জেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩১ জন। সরকারি বিধি-নিষেধ পালনে চরম অনীহায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। এতো বলার পরও অনেকেই মাস্ক ছাড়াও চলাফেরা করছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই সটকে পড়ছে অসচেতন মানুষগুলো। শহরের চাইতে জেলায় গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তারা করোনা ভাইরাসকে মানতেই চাইছে না। সচেতন কেউ মাস্ক পড়ার কথা বললে দুই-চার কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।

অলিগলি ও গ্রামের চায়ের দোকান, কাঁচাবাজার, মাছবাজার এবং যেকোন ছাদের তলা এখন ভয়ংকর ও হটস্পট হয়ে উঠেছে। চিনি, চাল, ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসে অনেকেই আড্ডায় মেতে উঠে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা জুড়ে করোনা সংক্রমণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি বিধি-নিষেধের ৬ষ্ঠ দিনে গত ৬ জুলাই ২৯টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় ১৯৩টি মামলা দেয়া হয় বিধি-নিষেধ অমান্যকারীকে।

মাস্ক না পড়া এবং বিধি-নিষেধ না মানায় ১৯৩ জনকে দণ্ডিত করা হয়েছে। ওইদিন অভিযানে ২,২৮,৮২০ টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অসচেতন ব্যক্তিকে। আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। প্রধান সড়ক ও অলিগলি এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জেলা শহর ও উপজেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা রয়েছে। নানা অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ। কেউ কেউ অতি-উৎসাহি হয়ে বের হচ্ছে। তাদেরকে জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। মানুষের অজুহাতের কোন শেষই নেই। কেউ মেডিকেলে, কেউ ব্যাংকে, কেউ কেউ মিথ্যা অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ। করোনা ভাইরাস রোধে সরকার ঘোষিত গত ১ জুলাই থেকে এখনো পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ কার্যকরে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ প্রশাসন। জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। এখনই যদি অসচেতন মানুষকে লাগাম দেয়া না যায়, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। পরিস্থিতি তখন সামাল দেয়া সম্ভবপর হয়ে উঠবে না। শহরের কয়েকটি কাঁচাবাজার ও গ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করছে না। মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্ব। শহরের গোলদীঘির পাড়ে আড্ডা জমে উঠেছে। কেউ কেউ হই-হুল্লোড় করে গানের রেওয়াজ করছে। তবে গ্রামের কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে তারা ক্লান্ত হয়ে উঠছে। সরকারি যা সহায়তা দেয়া হচ্ছে বার বার শহরের মানুষগুলোর কপালে জুটছে। এক্ষেত্রে আমাদের মতো গ্রামের মানুষগুলো তেমন সরকারি কিংবা বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। এজন্য অনেক সময় মানুষ পেটের তাগিদে রাস্তায় বের হচ্ছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৭ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২৯৯৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১৩৩৬ জন।

সুস্থ হয়েছেন ২৭২৯ জন, মারা গেছেন ২৬ জন, টেকনাফে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫০৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৩০৫ জন, মারা গেছেন ১২ জন, পেকুয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৮ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩০৮ জন, মারা গেছেন ৪ জন, চকরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪৩ জন, সুস্থ হয়েছেন ৭৮৫ জন, মারা গেছেন ১৪ জন এবং রামুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ৬৮১ জন, মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়াও গতকাল ৭ জুলাই কক্সবাজার সদরে ৬১ জন, চকরিয়ায় ৪ জন, মহেশখালীতে ২ জন, কুতুবদিয়ায় ২ জন, রামুতে ১৬ জন, উখিয়ায় ৬০ জন এবং টেকনাফে ৩১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, এযাবৎকালের জেলায় সর্বোচ্চ ১৭৬ জন শনাক্ত হয়েছে গতকাল। এখনই সতর্ক না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। জেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলুন, অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া পরিত্যাগ করুন, অতীব জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে এলে মাস্ক পরিধান করুন ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102