বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

প্রভা, ফারিয়া, সুন্দরী, বাহাদুরেরা এখন যেমন

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে

লাবণ্য, প্রভা, ফারিয়া, রানী ক্লিউপেট্রা বেশ রাজকীয় ভাব নিয়ে চলাফেরা করছে। তবে রাজার মেজাজমর্জি বেশি সুবিধার না। ফাল্গুন মাসে জন্ম নেওয়া ফাল্গুনী পানিতে ডুব দিয়ে মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছিল, আওয়াজ শুনে মাথা উঁচু করে একটু দেখে পাত্তা না দিয়ে আবার ডুব দিয়ে খাওয়া শুরু করল। রাজা বাহাদুর আর সুন্দরী দুই পা তুলে সালাম দেওয়া শিখেছে। ফুটবল খেলাটাও বেশ ভালোই রপ্ত করেছে। বাস্কেটবল খেলাটা শিখতেও বেশি দিন লাগবে না

গত মঙ্গলবার এদের সঙ্গে দেখা হলো বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়। লাবণ্য, প্রভা, ফারিয়া, ক্লিউপেট্রা আর রাজা হলো জিরাফের নাম। ফাল্গুনী জলহস্তীর বাচ্চা। আর রাজা বাহাদুর আর সুন্দরী হলো হাতি। সেদিন সাদা আর নীল ময়ূরের পেখম মেলার কোনো তাড়াই ছিল না। অথবা তারাও বুঝতে পেরেছিল লকডাউনে তাদের দেখতে তো আর কেউ আসবে না। তাই বয়েই গেছে পেখম মেলতে।

চিড়িয়াখানায় মানুষের কোলাহল নেই। তবে বড় বড় কড়ইগাছ, আমগাছসহ বিভিন্ন গাছে পাখিদের কলতানে মুখর পুরো চিড়িয়াখানা। চোখের সামনে দিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে কাঠবিড়ালি। সবুজে ছেয়ে আছে চিড়িয়াখানা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় প্রথম দফায় গত বছরের ২০ মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল। নভেম্বর থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানা। তবে চলতি বছরের গত ২ এপ্রিল থেকে আবার দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভেতরের উন্নয়নকাজসহ চলছে অন্যান্য রুটিনমাফিক কাজ।

দুটি লেকসহ ১৮৬ একরের বেশি জায়গাজুড়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের মতো। ঈদ বা বড় উৎসবে সংখ্যা আরও বাড়ে। বছরে ৪০ লাখের বেশি দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে হতো। চিড়িয়াখানার প্রায় ১৩৫ প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার পশুপাখিকেও এ চাপ নিতে হতো। দর্শনার্থীদের অনেকেই খাঁচার বাইরে থেকে ঢিল ছুড়ে বা মুখে শব্দ করে বিরক্ত করে পশুপাখিদের আরামে ব্যাঘাত ঘটান। পশুপাখিদের এখন আর বিরক্ত করার কেউ নেই। চিড়িয়াখানার কেয়ারটেকার বা দেখভালকারীদের সঙ্গে পশুপাখিদের সখ্য আগে থেকেই ছিল, এখন আরও বেড়েছে।

চিড়িয়াখানার রাজা–বাহাদুরেরা কেমন আছে, তা দেখতে মঙ্গলবার সকালে চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই বানরের খাঁচায় দেখা গেল প্রতিযোগিতা চলছে। একটু পরপর পানিতে লাফ দেওয়ার ঝুপঝাঁপ শব্দ। দুষ্টু বালকেরা অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেমন উঁচু থেকে পানিতে ঝাঁপ দেয়, তেমনই একেকটা বানর লাফিয়ে খাঁচার ওপরে উঠছে, আবার দুপ করে পানিতে লাফিয়ে পড়ছে। তাড়াহুড়ো করে আবার যাওয়ার সময় অন্যদের সঙ্গে মারামারিও লাগছে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা বলেন, ওরা আনন্দে আছে। আর গরম লাগছে বলে পানিতে ভিজিয়ে নিচ্ছে শরীর। আর টগর মানে বেঙ্গল টাইগার (পুরুষ) জিহ্বা দিয়ে চেটে পানি খেয়ে মাটিতে সটান হয়ে শুয়ে ঘুম দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাক ডাকারও শব্দ পাওয়া গেল।

সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় চিড়িয়াখানার সদস্যদের খাওয়ানোর তোড়জোড়। কেউ মাছ খায়, কেউ আবার মাংস। কারও লাগে আপেল, কমলা, আঙুর। কারও বা লাগে পাউরুটি। কলমিশাক থেকে শুরু করে কলাগাছ আবার কারও পছন্দের খাবার। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেখা গেল হরেক রকম খাবার এসে পৌঁছাচ্ছে চিড়িয়াখানায়। সেগুলোর ওজন ও গুণগত মান ঠিক আছে কি না, কর্মীরা তা তদারক করছেন। তারপর পশুপাখিদের খাঁচায় চলে যাচ্ছে সে খাবার। কারও কারও বেলায় আবার দিনে কয়েক দফায় খাবারের এ আয়োজন করতে হয়। মঙ্গলবার শুধু গরুর মাংসই ছিল ১৬৩ কেজি ৭০০ গ্রাম।

১৫ বছর ধরে বকের খাঁচায় খাবার দেন আওয়াল। জানালেন, পুঁটি আর চেওয়া নামক একটি মাছ বকেরা বেশি পছন্দ করে। প্রতিদিন ৬০ কেজির বেশি ছোট মাছই লাগে বকের খাঁচায়। শিংসহ অন্যান্য মাছ তো আছেই। মাছ ওজন দেওয়ার সময় আওয়ালের হাতে শিং মাছের কাঁটা ফুটে গেল। তবে আওয়ালের তেমন ভাবান্তর নেই। বকের খাঁচায় ঢুকে তিনি যখন মাছগুলো পানিতে ঢালছিলেন, তখন বকেরা আস্তে আস্তে এসে জড়ো হলো। টুপ করে মাছ গিলে মনের আনন্দে উড়তে লাগল। চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানালেন, খাঁচায় খাবার দেওয়ার পর সে খাবার খাবে কি না বা কখন খাবে, তা তাদের মর্জি। তবে ঠিক সময়ে তা দিতেই হবে। বাইরে লকডাউন বা যা–ই থাকুক না কেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102