নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো আবার করোনা রোগীতে ভরতে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে ভিড় বাড়লেও গত কয়েকদিনে রোগীর চাপ তীব্র হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত কেবিন/শয্যার শতভাগ রোগীতে ভরপুর। এসব হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে শয্যা খালি না থাকায় ফেরত যেতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ সপ্তাহ আগেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত কেবিন/শয্যার বেশির ভাগই খালি ছিল। কিন্তু গত ১০/১২ দিন ধরে এ চিত্র পাল্টে গেছে। হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে গেছে হাসপাতালগুলোতে। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য র্নিধারিত শয্যার একটিও খালি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বেসরকারি পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন ও ম্যাক্স হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার একটিও খালি নেই। শয্যা খালি না থাকায় এসব হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা অনেক রোগীকে ফেরত যেতে হচ্ছে। পার্কভিউ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বর্তমানে ৩০টি কেবিন নির্ধারণ করা আছে। এর একটি কেবিনও খালি ছিল না গতকাল সোমবার। তাছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৮টি আইসিইউর সবকয়টিতেও রোগী ভর্তি। শয্যা খালি না থাকায় সোমবার একদিনেই অন্তত ৭ জন রোগীকে ফেরত দিতে হয়েছে বলে জানালেন হাসপাতালের জিএম জিয়াউর রহমান। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শয্যা খালি থাকছেনা বলেও জানান তিনি। একই চিত্র মেট্রোপলিটন হাসপাতালেও। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ২৮টি কেবিন নির্ধারিত। সোমবার এসব কেবিনের সবকয়টিতেই রোগী ভর্তি বলে জানান মেট্রোপলিটন হাসপাতালের জিএম মোহাম্মদ সেলিম। শয্যা খালি না থাকায় কয়েকজন রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। হাসপাতালটির আইসিইউতেও ২ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
করোনা রোগীদের শয্যা খালি নেই বেসরকারি ম্যাঙ হাসপাতালেও। হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য বর্তমানে ৩৪টি কেবিন নির্ধারিত। সোমবার সবকয়টি কেবিনই রোগীতে পরিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন ম্যাঙ হাসপাতালের জিএম রঞ্জন প্রসাদ দাশ গুপ্ত। এছাড়া নির্ধারিত ৮টি আইসিইউর সবকয়টিতেও রোগী ভর্তি বলে জানান তিনি। তিন দিন আগেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫ জনের বেশি ছিলনা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ন্যাশনাল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৩১টি শয্যার সবকয়টিতে রোববার পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল। তবে সোমবার বেশ কয়েকজন রোগী হাসপাতাল ছেড়েছেন জানিয়ে পরিচালক ডা. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, সোমবার ২২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আইসিইউতে রয়েছে ৬ জন।
১০/১২ দিন আগেও রোগীর সংখ্যা কম ছিল জানিয়ে ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। অনেক সময় শয্যাও খালি থাকছেনা। এতে করে অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
সিএসসিআর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১৩টি শয্যা নির্ধারিত। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ১১ জন রোগী ভর্তি আছেন বলে জানান হাসপাতালটির আরএমও ডা. এমজাদ হোসেন। ৩ দিন আগেও মাত্র ৭ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন এ হাসপাতালে। করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান ডা. এমজাদ।
বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বর্তমানে একশটি শয্যা চালু আছে। এর মধ্যে সোমবার ৭৮ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানালেন হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক। এছাড়া আইসিইউতে ১০ জন রোগী চিকিৎসাধীন বলেও জানান তিনি।
বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি রোগী বাড়ছে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২০০ শয্যা নির্ধারণ করা হয়। সংক্রমনের হার কমায় কয়েকমাস ধরে একশ শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা চালু রয়েছে। একশ শয্যার মধ্যে সোমবার ৬৮ জন রোগী ভর্তি বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। এছাড়া করোনা আইসিইউতে আরো ৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন জানিয়ে বেশ কয়দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানালেন হাসপাতাল পরিচালক।
একই দিন ওয়ার্ডে ৫১ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। তিনি বলেন- তিন দিন আগেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০-এর কম ছিল। এখন সেটি ৫০ ছাড়িয়েছে। সোমবার আইসিইউতেও ৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে কদিন আগে মাত্র ২/৩ জন রোগী ভর্তি থাকলেও সোমবার পর্যন্ত রোগী বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন- আক্রান্তদের অনেকেই বাসায় বসে চিকিৎসা নেন। প্রথম দিকে হাসপাতালে আসছেন না। অনেকেই একদম অন্তিম মুহুর্তে হাসপাতালে আসছেন। ততক্ষনে কিন্তু ওই রোগীর ফুসফুস অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। বাসায় থেকে ফুসফুস বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর যারা হাসপাতালে আসছেন, বিশেষ করে তাদের রিকভার করার চান্স কম। এ ধরণের রোগীদের বাঁচানোটা খুবই কঠিন।
যে কারণে বাড়ছে সংক্রমন : কয়েকমাস কমলেও করোনা সংক্রমনের হার এখন ফের উর্ধ্বমুখি। চট্টগ্রামে দৈনিক সংক্রমনের হার ৭/৮ শতাংশ দেখালেও বিদেশগামীদের পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসেব করলে দৈনিক সংক্রমনের এ হার প্রকৃতপক্ষে ১৫ শতাংশের বেশি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলছেন- টিকাদান শুরুর পর করোনা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা আরো বেড়েছে। যেন এক ধরণের অবহেলা কাজ করছে মানুষের মাঝে। যার কারণে স্বাস্থ্য বিধি মানা তো দূরের কথা, অধিকাংশের মুখে মাস্কটিও দেখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া বিয়ে-গায়ে হলুদ, উৎসবসহ সব ধরণের সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে হরহামেশাই। এসব অনুষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য বিধি মানছেনা কেউ। এতে করে সংক্রমন আবারো বাড়ছে হুহু করে। মানুষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই করোনার সংক্রমন আবারো বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তারা বলছেন- সমপ্রতি করোনা আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেকেই কঙবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন
কমেন্ট করুন