রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

বিনা নোটিশে চিংড়িঘের ভরাট, মরছে লাখ লাখ পোনা

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১
  • ৩৩০ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে সীমানা প্রাচীরের বাইরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সাগর থেকে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে প্রায় ৫০ একর আয়তনের একটি চিংড়িঘের। এতে মারা পড়ছে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ মাছের পোনা। কোন নোটিশ ছাড়াই বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজের কথা বলে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দিনরাত এই মৎস্যঘের ভরাটের কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মৎস্য চাষী মহিউদ্দিন।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের প্রকল্প পরিচালক ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। ডাকযোগে প্রেরিত এ আবেদনে মহিউদ্দিন উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীরের সাথে লাগোয়া লবণের মাঠ ও জলাশয়ে বিগত দীর্ঘদিন যাবৎ চিংড়ি মৎস্যঘের করে আসছেন তিনি। বিমানবন্দরের বর্তমানে দৃশ্যমান সীমানা প্রাচীর ও বøকের কাজ সমাপ্ত হয় আগস্ট মাসের শেষের দিকে। ২০২০ সালের ২০ আগস্টের প্রাকৃতিক দূর্যোগে তাঁর চিংড়ি ঘেরের বাঁধ ভেঙে যায়।

এতে তাঁর ২ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়। সর্বশেষ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের সহযোগীতায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় তিনি মাস বুলডোজার দিয়ে মহিউদ্দিন প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে তিন দিক থেকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন।

ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসে সেখানে ২০ একর জায়গায় ৩০ লাখ চিংড়ি পোনা এবং বাকি ৩০ একর জায়গায় ৫০ লাখ চিংড়ি পোনা ফেলেন। এসব পোনা কিনতে খরচ হয় প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। এই ঘেরে দিনরাত ৭ জন পাহারাদার কাজ করে। যাদের মাসিক বেতন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

আবেদনে মহিউদ্দিন আরও উল্লেখ করেন, ৫ মাস পরে এইসব চিংড়ি উত্তোলন করলে আনুমানিক ২ ?লক্ষ কেজি চিংড়ি পাওয়া যেত। প্রতিকেজি ৫০০ টাকা বাজারমূল্য হিসেবে উত্তোলিত চিংড়ির মূল্য দাঁড়াত ১০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় গত ২৩ মার্চ থেকে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সিভিল এভিয়েশনের সহযোগীতায় চিংড়ি ঘের ভরাট শুরু করেছে। এতে নিধন হচ্ছে লাখ লাখ মাছের পোনা।

আবেদনে মহিউদ্দিন বলেন, দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়া ভূমিহীন সমবায় সমিতির নামে হাইকোর্টের আদেশ আছে ১৭০ একর জমির উপর। আদেশে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। লবণ ও মৎস্য খামারের উত্তর পাশে বিমানবন্দর সংলগ্ন জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া উত্তর কুতুবদিয়া পাড়া নামে একটি বসতি আছে। দক্ষিণে লবণ ও মৎস্য খামারের দক্ষিণ পাশে নদী ও মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া ও পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া আছে।

তিনি বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে, কোন নোটিশ ছাড়াই এ চিংড়িঘের ভরাট করে আমাকে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমি দেওলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে, পাগলপ্রায় হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে আমাকে। চিংড়ি চাষের জন্য নেওয়া এত ঋণের টাকা এখন কিভাবে পরিশোধ করবো আমি জানি না। তবুও উন্নয়ন কাজে বাধা দিইনি। দয়া করে আমার আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে ঋণের টাকা পরিশোধ করার সুযোগ দিলে সন্তানেরা রেহাই পেতে পারে এবং আমার পরিবারও মানসিকভাবে রক্ষা পাবে।’

মৎস্য চাষি মহিউদ্দিন বলেন, ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা আবেদনটি আমি সরাসরি কক্সবাজারের প্রকল্প পরিচালক এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা গ্রহন করতে রাজি না হওয়ায় ডাকযোগে পাঠাই। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমার ক্ষতির বিষয়টি সদয় বিবেচনা করার আর্জি জানাই কর্তৃপক্ষের কাছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102