রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

বঙ্গোপসাগর ও মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১
  • ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার মধ্যরাত ১২টা থেকে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। আর এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের প্রায় সকল মাছধরার নৌকা বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ফিরে এসেছে। ফলে আগামী ২ মাসাধিককালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নেয়ার সুযোগ।

গতকাল বুধবার শেষবারের মতোই মাছ ধরে ফিশিংবোটগুলো এখন ঘাটে। সাগর থেকে শতশত ট্রলারের ঘাটে ফেরার এ দৃশ্য দেখা যায় সমুদ্র সৈকত থেকে। বুধবার কক্সবাজারের জেলেরা ঘাটে ফিরে মলিন বদনে। প্রায় সবার মাঝে স্পষ্ঠ চিন্তার ছাপ। পরিবার পরিজনের মাঝেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ গতরাত ৮টার সময় জানান, আজ থেকে শুরু হওয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে কক্সবাজারের প্রায় ৭ হাজার ইঞ্জিন নৌকার লক্ষাধিক জেলে বুধবার বিকালের মধ্যেই ঘাটে ফিরে এসেছে। তবে কিছু নৌকা গভীর সাগর থেকে ঘাটে ফেরার পথে রয়েছে বলে তিনি জানান। দূরত্মের কারণে বোটগুলোর ঘাটে ফিরতে বিলম্ব ঘটছে বলে ধারণা করে তিনি বলেন, আশা করি হাতেগোনা যেসব বোট এখনও ঘাটে ফিরতে পারেনি তারাও যথাসময়ে ফিরে আসবে।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।

এদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার ফিশারীঘাটস্থ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং বরফকলগুলোও ২ মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েক হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছে। এরফলে আগামী ২ মাস শহরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো নির্জন-নির্জীব হয়ে থাকবে বলে জানান ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার মধ্যরাত ১২টা থেকে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহণ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে দাবী করা হয়।

সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এরআগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, প্রজননকালে বঙ্গোপসাগর উপকুলে মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পেলে এর সুফল জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাবে। ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাময়িকভাবে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুষিয়ে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102