রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে পারবে ভারত?

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
  • ৩১১ বার পড়া হয়েছে

এপ্রিল ও মে মাসে করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে কেবলই একটু একটু করে বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ভারত। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা এখন সতর্ক করে বলছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারত করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়তে পারে। এই ঢেউ দেশটি ঠেকাতে পারবে কি-না সে প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হয়েছে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারতে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাদের প্রস্তুতি নিয়ে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অনেকেই আবার করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের পর আসা নতুন ধরন ‘ডেল্টা প্লাস’ মোকাবেলায় বিদ্যমান সব টিকা কাজ করবে কি-না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সঙ্গে ডেল্টা প্লাসের সংশ্লিষ্টতা আছে। ভারতে গতবছর প্রথমে ডেল্টা ধরনই শনাক্ত হয়েছিল। এই ধরনের কারণে দেশটিতে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। তবে মহামারীর নতুন ঢেউ আসা নিয়ে শঙ্কা কতটুকু বাস্তবসম্মত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনাভাইরাস মহামারীর আরেকটি ঢেউ আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই ঢেউয়ের ভয়াবহতা এবং বিস্তার কেমন হবে, তা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।

কোভিড সুরক্ষা প্রটোকল : ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ তুঙ্গে ছিল গত মে মাসে। সে সময় দিনে চার লাখের বেশি রোগী ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে ভারতে এই হার কমে গড়ে দৈনিক ৫০ হাজারের কিছু বেশি রোগী কোভিড শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণ কমার ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আরোপ করা কড়া লকডাউনের একটি বড় অবদান রয়েছে।

ভারতে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য বাজারে মানুষের ভিড়, নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উৎসবকে দায়ী করা হয়েছে। তাছাড়া, সরকারের বাজে নীতিগত সিদ্ধান্ত, নজরদারিতে ঘাটতি, আগাম সতর্কতা আমলে না নেওয়ার মতো বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে দায়ী। এই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হলে ভারতে মহামারীর তৃতীয় ঢেউও বিধ্বংসী হতে পারে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সরকারি নীতি বিশেষজ্ঞ চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া বলেন, ভারত আবারও একটি নাজুক পর্যায়ে চলে এসেছে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের পরবর্তী ঢেউ কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে মানুষের আচরণের ওপর।

সংক্রমণ কমতে থাকলে রাজ্যগুলোকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন চন্দ্রকান্ত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাড়াহুড়ো করে সবকিছু চালু করতে গেলে মানুষ যদি করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার প্রটোকল অনুসরণ না করে, তাহলে ভাইরাসকে কেবল আরও দ্রুত ছড়িয়েই দেওয়া হবে।”

যদিও অতীতের কোভিড সংক্রমণ থেকে মানুষ সুরক্ষা পেতে পারে। কিন্তু কোভিড সংক্রমণ থেকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা নির্ধারণ করা কঠিন। ভারতের অনেক শহর-নগর-গ্রামেই কোভিড পরীক্ষার জন্য মানুষকে রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ফলে কে কোভিড আক্রান্ত হয়েছে বা হয়নি তা জানার উপায় নেই।

এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সবাই একটি ব্যাপারে একমত যে, ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী সব ধরনের প্রাদুর্ভাব ঘটার হুমকি যেমন আছে, তেমনি জনসংখ্যার একটি বড় অংশই এখনও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। তাই মানুষজনের কোভিড-কে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

চিকিৎসক ফাতহাহুদীন মনে করেন, তৃতীয় ঢেউ ভারত সামাল দিয়ে উঠতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই একবছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই মহামারীর লড়াইয়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাসহ সবারই সচেতন থাকতে হবে, হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102