শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি ডায়রিয়ার প্রকোপ

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১
  • ২৮৯ বার পড়া হয়েছে

গরমের তীব্রতা বেড়েই চলছে। গত ১ সপ্তাহের প্রচন্ড গরমে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে। কয়েকদিন যাবৎ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। চরম দূভোর্গে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। কয়েকদিনের মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে যা ঘূর্নিঝড় আকারে উপকূলে আঘাত হানার কথা বলছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে তাপজনিত রোগির সংখ্যা। শহরের প্রাইভেট হাসপাতালের পাশাপাশি সদর হাসপাতালে রোগির চাপ সামলাতে ত্রাহি অবস্থা চিকিৎসকদের।

গতকাল ও কক্সবাজারে ৩৫ ডিগ্র সেলসিয়াস তাপ রেকর্ড হয়েছে। গরমের তীব্রতা আরো ২/৩ দিন থাকতে পারে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে এমনিতে নিম্নআয়ের মানুষ চরম দূর্বিসহ জীবন কাটছে উপরন্তু তাপজনিত রোগের কারণে পরিবারে চলছে ত্রাহি অবস্থা। দৈনিক ৫’শ রোগিকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের। মানবেতর জীবন চলছে জেলাজুড়ে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহীন মোঃ আবদুর রহমান জানান, প্রতিদিনই রোগির ভীড় বাড়ছে। রোগির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে ২৫০ শয্যার কিন্তু রোগি ভর্তি রয়েছে (গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত) ৫৫৮ জন। আগের ৫৫০ জন রোগির সাথে গতকাল ভর্তি হয়েছে ২৫০ জন নতুন রোগি। আগামিকাল আরো রোগি ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগি আরো বাড়তে পারে।

ভর্তি হওয়া রোগির মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ঠজনিত রোগির সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরের রোগি ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিনা কারণে গরমে বাইরে না যাওয়া, প্রচুর পরিমানে পানি পান করা, ফলের রস পান এবং পরিস্কার পরিছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি শিশুদের বেশি আক্রমন করছে। এছাড়া হিথস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। ফলে আপাতত গরমে বাড়ির বাইরে বের হতে না পারলে ভাল। ডাঃ শাহীন মোঃ আবদুর রহমান আরো জানান, ভর্তি রোগির পাশাপাশি গতকাল আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন রেকর্ড ১২০০ জন রোগি।

জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০৪ জন রোগি। রোগির চাপ আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান। তবে করোনা আক্রান্ত রোগি সদরে ভর্তি রয়েছেন (গতকাল পর্যন্ত) ৬৮ জন। করোনা রোগি কক্সবাজারে বৃদ্ধির সংখ্যা স্থিতিশীল বলে জানান এ চিকিৎসক।

এদিকে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা দুর্বিষহ দিন অতিবাহিত করছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও হাসফাঁস করছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্থি নেই। প্রখর রোদে সাধারণ শ্রমিকদের জীবন চলছে দূর্বিসহ। গত কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দিনমজুর, রিক্সা চালক, খেত-খামারিরা প্রচন্ড রোদের কারণে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, গরমজনিত রোগের কারণে হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেশি। গরমে রোটা নামক ভাইরাসের আক্রমনের কারণে ডায়রিয়া রোগি বেড়ে যায়। এ সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তরল খাবারের পাশাপাশি রিহাইড্রেশন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। গরমে শিশুর ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের প্রভাব বেশি হবে স্বাভাবিক। শিশুদের এসব রোগ থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

করোনায় লকডাউনে এমনিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এরমধ্যে যোগ হয়েছে তাপজনিত রোগের প্রার্দূভাব। এ সময় সরকারি ত্রাণসহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় অনেকটা নিরব আহাজারি চলছে বেশিরভাগ পরিবারে। ঘরে ঘরে রোগির সংখ্যা বাড়লেও আয় বন্ধ থাকা এ সব পরিবারে ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধি জরুরী। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের আরো গতিশীল সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা উচিত বলে মনে করেন সচেতনমহল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102