শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন

বাজেট ২০২১-২২ঃ বিদেশি ঋণ বাড়ছে রেকর্ড পরিমাণ

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১
  • ১৭২ বার পড়া হয়েছে

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি তহবিল থেকে রেকর্ড পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যবহার করার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার। যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দা থেকে বের হয়ে আসতে বাংলাদেশের দিকে উদার হাতে এগিয়ে এসেছে উন্নয়ন অংশীদাররাও।

প্রসঙ্গত, মহামারির বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ সংশোধিত চলতি বাজেটের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। বাজেট প্রণয়নে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, ঘাটতির অর্থ জোগাতে নতুন বাজেটে সরকার ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিদেশি ঋণ বাড়াতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এই হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ কম।

নতুন বাজেটে বৈদেশিক অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা হিসেবে ৯২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

তথ্য বলছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বাজেটে বিদেশি ঋণ বাড়ছে। সহজে বিদেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াটাও এর আরেকটি কারণ।

আগামী বাজেটে এনবিআর-এর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে না। ২০২১-২২ বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাড়ছে মাত্র ৭৮ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান আসবে বিদেশি উৎস থেকে।

অবশ্য এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অনুদান পাইপলাইনে রয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি নির্ভরতা বাড়ছে। এটা এক অর্থে ভালো। আরেক অর্থে মন্দ। যে কোনও প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণের যথাযথ ব্যবহার ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা গেলে একদিকে খরচ কম হয় অন্যদিকে কাজের মানও ভালো হয়। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ উৎস- যেমন ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমে। তবে বিদেশি ঋণ যথাযথ ব্যবহার ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা না গেলে হিতে বিপরীত হয়।’

এদিকে দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে বসে থাকলেও মহামারিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তায় ঋণ দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না সরকার। আসন্ন বাজেটে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলো ৭৬ হাজার কোটি টাকা দেবে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম। ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা আহরণ করবে সরকার।

এদিকে বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেও সেই তুলনায় খরচ করতে পারছে না সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় জুলাই থেকে মার্চ- এই ৯ মাসে সরকারি টাকা খরচ হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে খরচ হয়েছে সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা।

উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকার প্রতিবছর কতটি ঋণচুক্তি সই করছে, আর কী পরিমাণ অর্থ ছাড় হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে ইআরডির প্রতিবেদনে। তাতে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মোট ৭০৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। ওই বছরে ছাড় হয়েছে ৩৫৬ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৯৬ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। সেই বছর ৩৬২ কোটি ডলার ছাড় হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102