মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন

সম্মতি ছাড়াই জাতিসংঘের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তথ্য শেয়ারের অভিযোগ

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১
  • ৩৬১ বার পড়া হয়েছে

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা – ইউ এন এইচ সি আর-এর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সম্মতি ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য মিয়ানমারকে শেয়ারিং করার অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইর্টস ওয়াচ বা ডবলুুএইচ। জাতিসংঘের সার্বজনিক ঘোষণাপত্র লংঘন করে বাংলাদেশের সাথে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের ক্যাম্পে নিবন্ধিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিচয় পত্র প্রদান করেছে। যা প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরিষেবার জন্য আবশ্যক। বাংলাদেশ এসব তথ্য সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে অ্যানালগ বা অনুরূপ স্থির ছবি, বৃদ্ধা আঙ্গুলের ছাপের ছবি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জীবনী সংক্রান্ত তথ্য গুলো ব্যবহার করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সংকট ও সংঘাত বিষয়ক পরিচালক লামা ফাকিহ বলেছেন, “জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমগুলো সংস্থাটির নীতি গুলির পরিপন্থী ছিল এবং রোহিঙ্গাদের আরও ঝুঁকির মুখোমুখি করেছে”। “ইউএনএইচসিআর এর কেবল তখনই উচিত ছিল সংগৃহীত তথ্যের অনুমোদন দেয়া যা মূল দেশ গুলির সাথে শেয়ার করার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীনভাবে এবং অবহিতমূলক সম্মতি নেয়া।”

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর সাথে তাদের নিবন্ধকরণের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ২৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এসময় ২০ জন মানবিক সহায়তা কর্মী, বিশ্লেষক, স্থানীয় অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং যারা রোহিঙ্গা নিবন্ধনে পর্যবেক্ষণ করেছেন বা অংশ নিয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেছেন।

এব্যাপারে গত ফেব্রুয়ারিতে এবং এপ্রিলে ইউএনএইচসিআরের কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন ও এর গবেষণার ফলাফল প্রেরণ করে এবং ১০ই মে ইউএনএইচসিআর এর প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে ইউএনএইচসিআর কোনও রকম ভুল বা নীতি লংঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের সময় এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছিল এবং সম্মতি পেয়েছিল।

সংস্থাটি বলেছে যে তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘকালীন সমাধান খুঁজে বের করা এবং কোনও রোহিঙ্গা যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।এটি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের অধিকার রক্ষা করতে সহায়তা করবে।

নিবন্ধনের যে রশিদে ছাপা হয়েছিল তা ইংরেজিতে।রোহিঙ্গাদের যে রশিদ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে “হ্যাঁ” বোধক চিহ্ন ছিল যদিও কখনও তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়নি।ইউএনএইচসিআর নিবন্ধকরণের পরে রোহিঙ্গা যে রশিদ দিয়েছিল তাতে “হ্যাঁ” বা “না” বোধক চিহ্ন উল্লেখ করে একটি ঘর রয়েছে। যেখান বলা হয়েছে যে মিয়ানমার সরকারের সাথে তথ্য শেয়ার করা যাবে কিনা।

২০১৮ থেকে ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি ব্যক্তির বায়োমেট্রিক এবং অন্যান্য তথ্য সহ মিয়ানমারের কাছে কমপক্ষে ৮ লক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছে। তা থেকে প্রায় ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সম্মতি জানায় বলে জানা গেছে। ইউএনএইচসিআর এর সার্বজনীন নির্দেশিকায়, এই জাতীয় তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি স্বীকার করে বলেছে যে, “কোনও [স্বতন্ত্র ঘটনা] তথ্য মূল দেশের [মাত্রিভূমি] কর্তৃপক্ষের সাথে ইউএনএইচসিআর-এর শেয়ার করা উচিত নয়।”

ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে নীতি লংঘন করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রায় সকল রোহিঙ্গার কেউই বুঝতে পারেনি যে তাদের তথ্য মিয়ানমার সরকারের সাথে শেয়ার করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102