শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন

সোনাদিয়ার মোহনায় সক্রিয় জলদস্যুরা

সৈকত
  • আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪০৭ বার পড়া হয়েছে

জলদস্যুদের তাণ্ডবে মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূল আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন নতুন কৌশলে জলদস্যুরা বিভিন্ন ফিশিং বোটে তার চালাচ্ছে। গত ১৫ এপ্রিল ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সোনাদিয়ার প্যারাবন থেকে অস্ত্রসহ ৬ জলদস্যুকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। বিগত দুই বছরে তিন দফায়া মহেশখালী ও বাঁশখালীতে ১৫৪ জন জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করলেও সম্প্রতি আবারও সোনাদিয়া মোহনায় তাণ্ডব শুরু নহওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

মহেশখালীর সোনাদিয়া মোহনায় জলদস্যুদের নতুনকরে তান্ডবের কারণে সম্প্রতি অস্ত্রসহ ১৫৪ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব জলদস্যুদের মধ্যে অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় পুরনো পেশায় ফিরে এসেছে বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও এলাকার নতুন উঠতি বয়সী শিশু-কিশোরদের এসব কাজে উদ্বুদ্ধ করছে বলে এমন তথ্য মিলেছে স্থানীয় পর্যায়ে।

মহেশখালী কুতুবজম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন জানান, জলদস্যু দমনে ইউনিয়ন পরিষদ সহ স্থানীয় লোকজন সচেষ্ট রয়েছে। আমরা জলদস্যুদের যেকোন তথ্য পেলে প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছি। বিগত সময়ে দেড় শতাধিক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করার পর কিছুদিন সোনাদিয়ার মোহনা এবং বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের তৎপরতা কমলেও সম্প্রতি তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে জেলেরা এবং ফিশিং ট্রলারের মালিকরা অনেকটা আতঙ্কিত।

ফিশিং ট্রলারের মালিক নুরুল আফসার জানান আমরা অনতিবিলম্বে নতুনভাবে উঠতি জলদস্যু ও তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই। বিগত সময়ের পুরনো বাহিনীগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সক্রিয় গডফাদাররা। তাদের অবিলম্বে দমন করা না হলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

তিনি আরো জানিয়েছেন এই মৌসুমে ফিশিং ট্রলার ব্যবসায় মোটা অংকের লোকসান গেছে সকল ট্রলার মালিকদের।আগামী মে মাসের ২০ তারিখ থেকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ৬৫ দিন। এরমধ্যে সোনাদিয়ার মোহনায় জলদস্যুদের তাণ্ডব আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা এখন এই সংক্ষিপ্ত সময়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছি। ট্রলার একদিন বন্ধ রাখলে মৌসুম ওয়ারী শ্রমিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে ট্রলার থেকে চলে যায়। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।

কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন সাবেক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত সময়ে জলদস্যুদের প্রধান আস্তানা ছিল মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন এর ৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এসব এলাকার পাহাড়ে জলদস্যুরা একাধিক আস্তানা গড়ে তুলেছিল। সম্প্রতি কিছু জলদস্যুর আত্মসমর্পণ ও প্রশাসনের অভিযানের কারণে এসব আস্তানা এখন নেই।

তবে তাদের প্রধান গডফাদার ও বাহিনীর একাধিক সদস্য এখনো বীরদর্পে রয়েছে। এসব গডফাদাররা কিছুদিন এলাকার বাইরে থাকলেও প্রশাসনের শিথিলতার কারণে এখন এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে পুনরায় জলদস্যু বাহিনী। সম্প্রতি সোনাদিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৬ জলদস্যুর মধ্যে কালারমারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রয়েছে দুজন, শাপলাপুরের রয়েছে তিনজন ও ধলঘাটার রয়েছে একজন। এরা সবাই উঠতি জলদস্যু।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাগরের জলদস্যুতা বন্ধ হলে কক্সবাজার শহরকেন্দ্রিক একটি বিশাল সিন্ডিকেটের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। জলদস্যুরা যে সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে আসে এসব মালামাল নিয়েই মূলত তারা ব্যবসা পরিচালনা করে।

এদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে মহেশখালীর গডফাদারদের। সাগরে জলদস্যুতা কমে আসলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের ব্যবসা চালু করতে তারা জলদস্যুদের বিভিন্নভাবে অগ্রিম টাকা দিয়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

মহেশখালী থানার ওসি মো. আব্দুল হাই জানান, ৬ জলদস্যুকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে জলদস্যুতা দমনে আমরা সক্রিয় আছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
themesba-lates1749691102